দীপাবলি রাতে কি করবেন আর কি করবেন না
দীপাবলি রাতে করণীয় ও বর্জনীয়
দীপাবলি, যা আলোর উৎসব নামে পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও উদযাপিত হয়। দীপাবলি রাতের আনন্দ ও সজীবতায় আমরা আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার দূর করার পাশাপাশি, পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে সুখ-শান্তি কামনা করি। তবে দীপাবলি উদযাপনের সময় আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে আনন্দ মসৃণভাবে উপভোগ করা যায় এবং পরিবেশ বা অন্য কারো ক্ষতি না হয়।
করণীয় বিষয়গুলো
১. বাড়ি পরিষ্কার ও সাজানো: দীপাবলির আগে ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করা একটি বিশেষ প্রথা। এটি বিশ্বাস করা হয় যে দেবী লক্ষ্মী পরিষ্কার ও সজ্জিত বাড়িতে প্রবেশ করেন। তাই ঘর-বাড়ি পরিষ্কার ও সাজানোর মাধ্যমে নিজেকে আরও সতেজ ও প্রফুল্ল করা যায়। মোমবাতি, প্রদীপ ও রঙিন বাতি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন স্থান আলোকিত করুন। বিভিন্ন ধরণের রং, ফুলের মালা বা রঙ্গোলি ব্যবহার করে দোর গোড়ায় সাজাতে পারেন।
২. পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো: এই সময় পরিবারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীপাবলিতে পরিবারের ছোটো বড়ো সবার সঙ্গে একত্রে মিলিত হওয়া এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক প্রশান্তি দেয়। দীপাবলির দিনে আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করা, মিষ্টি বিতরণ করা ও শুভেচ্ছা বিনিময় করা আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
৩. প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো: প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালানো দীপাবলির অন্যতম প্রধান রীতি। এটা অন্ধকারকে দূর করে এবং আলোর মাধ্যমে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ঘরের বাইরে ও ভিতরে বিভিন্ন স্থানে প্রদীপ জ্বালান, যা ঘরকে আরও আলোকিত করে তোলে এবং সৌন্দর্য বাড়ায়।
৪. পরিবেশ-বান্ধব আতশবাজি ব্যবহার: দীপাবলিতে আনন্দের খাতিরে আতশবাজি ফোটানো একটি পুরোনো রীতি। তবে সাধারণ আতশবাজির তুলনায় পরিবেশ-বান্ধব আতশবাজি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলি কম শব্দ করে এবং কম দূষণ সৃষ্টি করে। শিশুদের জন্য নিরাপদ আতশবাজি ব্যবহার করা উচিৎ যাতে তাদের কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকে।
৫. পরিবেশ রক্ষা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি: আতশবাজির কারণে দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যা থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীপাবলি উদযাপন করার সময় এ বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন নিজে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে দীপাবলি উদযাপন করতে এবং অন্যদেরও তা করতে উৎসাহিত করুন।
বর্জনীয় বিষয়গুলো
১. অতিরিক্ত আতশবাজি ফোটানো: আতশবাজির কারণে বায়ু ও শব্দ দূষণের সমস্যা বেড়ে যায়। ধোঁয়া ও শব্দবাহিত দূষণের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের শারীরিক অসুবিধা হয়। পোষ্য প্রাণীরাও আতশবাজির বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই খুব বেশি আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যদেরও এই বিষয়ে সচেতন করুন।
২. প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহার: প্লাস্টিকের সামগ্রী, বিশেষ করে প্লাস্টিকের প্রদীপ বা অলংকার ব্যবহার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এগুলি খুব ধীরে অবনমিত হয় এবং পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করে। পরিবর্তে, মাটির প্রদীপ বা কাগজের তৈরী আলংকারিক সামগ্রী ব্যবহার করা ভালো। এসব জিনিস পরিবেশ-বান্ধব এবং সহজেই পরিবেশে মিশে যায়।
৩. অতিরিক্ত খাবার অপচয়: দীপাবলির আনন্দে আমরা অনেক খাবার তৈরি করি, কিন্তু সেগুলি অপচয় করা উচিত নয়। অতিরিক্ত খাবার বানানোর পরিবর্তে প্রয়োজনমতো খাবার প্রস্তুত করুন। যদি অতিরিক্ত খাবার থেকেই যায়, তবে সেগুলি দুঃস্থ বা ক্ষুধার্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করতে পারেন।
৪. জীবজন্তুদের প্রতি অমানবিক আচরণ: আতশবাজি এবং শব্দদূষণের কারণে অনেক পোষা ও বন্য প্রাণী ভীত ও আহত হয়। বিশেষ করে পথের কুকুর-বিড়াল আতশবাজির বিকট শব্দে ভয় পায়। এই সময় তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের শান্ত পরিবেশ প্রদান করা আমাদের কর্তব্য। পোষা প্রাণী থাকলে তাদেরকে বিশেষ যত্নে রাখা এবং আতশবাজির শব্দ থেকে রক্ষা করা উচিত।
৫. ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা থেকে বিরত থাকা: দীপাবলি একটি ধর্মীয় উৎসব, তাই এর মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় আবেগ জড়িত থাকে। অন্য ধর্মের মানুষদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। ধর্মীয় পার্থক্যের কারণে কেউ যেন উৎসবের আনন্দে বাধা সৃষ্টি না করে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।
উপসংহার
দীপাবলি একটি এমন উৎসব, যা আমাদের আলোর পথে আহ্বান জানায় এবং মানবিক গুণাবলিকে উন্নত করতে প্রেরণা যোগায়। এই দিনটির সত্যিকারের আনন্দ উপলব্ধি করতে হলে আমাদের সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিয়ে দীপাবলি উদযাপন করলে আমরা একদিকে যেমন আনন্দ উপভোগ করতে পারি, অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।